বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর নতুন রাস্তা মোড় এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
ভোর ৬টার দিকে ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর, খালিশপুর, দিঘলিয়া, আলীম, ইস্টার্ন, কার্পেটিং ও জেজেআই জুট মিলের প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক কর্মস্থলে না গিয়ে নিজ নিজ মিল গেটে অবস্থান নেয়। সেখানে শ্রমিকরা পৃথক পৃথকভাবে মূল ফটকের সামনে ধর্মঘট শুরু করে। পরে সকাল ৮টায় বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নতুন রাস্তা মোড়, আটরা আলীম গেট ও নওয়াপাড়া রাজঘাট এলাকার খুলনা-যশোর মহাসড়ক ও রেললাইনের ওপর টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে সকল যান ও ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকদের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় কিছু শ্রমিক পাবলা পুলিশ বক্সে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশ বক্সের দরজা, জানালা ভাঙচুর করে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়ক-রেলপথ অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেয় তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত দুদিনের ন্যায় বৃহস্পতিবার সকালে সড়ক-রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলনরত শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রমিকরা নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থিত পুলিশ বক্সে হামলা চালায়। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ধাওয়া দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এসময় বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করে তারা। খবর পেয়ে পুলিশ কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) সরদার রকিবুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
কেএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘হঠাৎ করেই শ্রমিক-পুলিশ উত্তেজনার পর শ্রমিকরা দৌলতপুর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করে। ফাঁড়িতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আহতদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। হামলার কারণ জানার চেষ্টা চলছে।’
শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি থেকে পুলিশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা ঘটেছে। যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ১০-১৫ জন শ্রমিক আহত হয়েছে। তবে শ্রমিক আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে অনেকে বলছেন, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান খুলনায় আসছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় পাটকল হওয়ায় শ্রমিকরা উদ্দেশ্য করে এ হামলা চালিয়েছে।
শ্রমিকরা নগরীর খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে খুলনা-যশোর মহাসড়ক, নতুন রাস্তা মোড় থেকে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড সড়ক, বিআইডিসি সড়ক এবং রেলপথ অবরোধ করে রেখেছে। এছাড়া তারা বিক্ষোভ মিছিল, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। শ্রমিকদের সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করার কারণে নতুন রাস্তা মোড় দিয়ে যানবাহন ও খুলনার সঙ্গে রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশোধ, মজুরী কমিশন কার্যকর ও প্রতি সপ্তাহের মজুরী প্রতি সপ্তাহে প্রদানসহ নয় দফা দাবি আদায়ে গত ২৯ মার্চ ৪ দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় পাটকল শ্রমিক লীগ।